তিন মাস সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ । ভাবছি কিভাবে স্ত্রী সন্তান, পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া, মধু আহরণ করে সংসার চলতো। তিন মাস সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ বন্ধ রয়েছে। এলাকায় তেমন কোন কাজ কর্ম নেই। এখন সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমন কথাগুলি বলছিলেন কয়রার সর্ব দক্ষিনের জনপদ দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের জেলে মুর্শিদুল আলম। শুধু মুর্শিদুল আলম নয় এমন কথা জানালেন ঐ জনপদের অনেকাংশ মানুষ। তাদের সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে চলে সংসার। সুন্দরবন বন্ধের কারনে তাদের কষ্টের সীমা নেই। ইতিমধ্যে তারা সরকার থেকে ৭০ কেজি ৯ শ গ্রাম চাল ছাড়া অন্য কোন সহযোগিতা পায়নি। তা আবার মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের কিছু করা হয়নি। উপকুলীয় কয়রার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবনে তিন মাস মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় উপকূলীয় জনপদ কয়রা উপজেলার জেলেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বন্ধের সময় জেলেরা সামন্য কয় কেজি চাল ছাড়া আর কোনও ধরনের আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় অলস সময় পার করছেন জেলেরা। উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে খাদ্য সংকট সহ আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের উপার্জনের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরা। এছাড়া অনেকে মধু সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে দীর্ঘ সময় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৩ হাজার ৫২৬ জন। তবে স্থানীয় জেলে-বাওয়ালীদের দাবি জেলেদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। ভৌগোলিক কারণেই উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। ইউনিয়ন গুলিতে অন্তত্য ৫০ হাজার জেলে পরিবারের বসবাস। যারা বংশপরম্পরায় বনজীবী।সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া আহরণ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের জেলে আসাদুল ইসলাম বলেন, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ। বন্ধের সময় সাগরে মাছ ধরা জেলেদের সরকারি সহায়তা করা হলেও সুন্দরবনের জেলেদের কিছুই দেয়া হয়না। এর মধ্যে সবকিছুর দাম বাড়তি। বন্ধের সময় সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য না করলে আমাদের সামনের দিনগুলো খুবই কষ্টের মধ্যে যাবে। তাই তারা সরকারের নিকট সহযোগিতার দাবি জানিয়েছে। সুন্দরবন কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ১ জুন থেকে সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এবং পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাস-পারমিট। এ সময় বন্য প্রাণী শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ আহরণ বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বন বিভাগ। কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার বলেন, অনেকে প্রকৃত জেলে কিন্তু তাদের কার্ড না থাকায় আমরা উপকারভোগীর আওতায় আনতে পারছি না। যারা প্রকৃত জেলে না অথচ জেলে কার্ড আছে আমরা তাদের যাচাই-বাছাই করে কার্ড বাতিল করে প্রকৃত জেলেদের উপকারভোগীর অন্র্Íভূক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সকল ধরনের পর্যটক ও বনজীবিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্ধের সময় জেলে বাওয়ালীদের বিকল্প খাদ্য সহায়তার জন্য একটি প্রস্তাবনা মৎস দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।