খুলনা, বাংলাদেশ
রবিবার | ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ | ১১:১৬ রাত

কয়রার চেয়ারম্যান ভাগ্নের আমলনামা

কয়রার চেয়ারম্যান ভাগ্নের আমলনামা
কয়রার চেয়ারম্যান ভাগ্নের আমলনামা

সেন্ট্রাল ডেস্ক | ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ | মঙ্গলবার | বিকাল ৫:২৪

খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন মটর চালক সমবায় সমিতির একজন সদস্য থেকে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের নেতা হয়েছিলেন। গোটা উপজেলায় নিজেকে পরিচয় দিতেন চেয়ারম্যান ভাগ্নে ।গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে আত্মগোপনে থেকে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও উস্কানিমূলক একাধিক পোস্ট দিতে দেখা যায়।

*মোটর সাইকেল চালক থেকে হয়েছেন কোটিপতি।

*নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তি 

*সুন্দরবনের একাংশের গডফাদার 

*সরকারি সম্পত্তি দখল করে আবাসন নির্মাণ ও ইজারা দেওয়ার অভিযোগ

কয়রা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম ও কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম বাহারুল ইসলামের আপন ভাগ্নে তিনি।আরেক মামা খোকন সুন্দরবন মটর চালক সমবায় সমিতি সভাপতির মৃত্যুবরণ করলে এই পদ নিজের দখলে নেন।তার পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এস এম মাসুম বিল্লাহকে। সমিতির সদস্যদের নিয়ে নিজের গুন্ডা বাহিনী গঠন করে নিজেকে ডন বলে পরিচয় দেন এই নেতা। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি ও জায়গা দখল, মিথ্যা মামলা,চাঁদাবাজি , মৎস্য ঘের দখলসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল মাষ্টারমাইন্ড ।দুই চেয়ারম্যান মামার ছত্রছায়ায় গত ১৫ বছরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন ‌। 
স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের মতে,২০১৪ সালে এস এম মাসুম বিল্লাহ একজন মটর সাইকেল চালক ছিলেন।তার মামা খোকন সুন্দরবন মটর সাইকেল চালক সমবায় সমিতি সভাপতি মৃত্যুবরণ করলে পরে সেই পদ নিজের দখলে নেন। এবং আরেক মামা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এস এস শফিকুল ইসলাম ২০১১ সালে কয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনি সুন্দরবনের একাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করেন।একই সাথে শ্রমিকলীগ নেতা আমিনুর রহমান, জাহাঙ্গীর ও মাষ্টার হাবিবুর রহমানের সহযোগিতায় সুন্দরবনের দস্যু বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সুন্দরবনে খাল বিক্রিয় ও খালে অবৈধভাবে বিষ প্রয়োগে মাছ ও হরিণ শিকার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন।২০২৩ সালে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের খাল দখলকে কেন্দ্র করে খুলনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে বহিষ্কার করে। 
এছাড়া মাসুম বিল্লাহ নিজের মামা এস এম শফিকুল ইসলাম ও এস এম বাহারুল ইসলামের সহযোগিতায় সরকারি খাল দখল ও ভরাট করে ৪ টি  প্লাটে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছেন।একই সাথে কয়েক বিঘা জমিতে ফসলি আবাদ গড়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন ‌। স্থানীয় ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসবের প্রতিবাদ করায় লাঞ্চিত হয়ে ফিরে গেছেন।আর এসব অপকর্ম করে মেয়ে ও স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ডিপোজিট ও বীমা কোম্পানিতে একাধিক শেয়ার ক্রয় করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন,তিনি জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা সহযোগিতায় এখন ও সুন্দরবনের একাংশের নিয়ন্ত্রণ করছেন। বন বিভাগের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে গভীর রাতে সুন্দরবনে গড়ে উঠা চর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে।এ কাজে তার নিজের কোটি টাকা মূল্যের বাল্কহেড ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া গত ১৫ বছর ধরে কয়রা সদরে মদিনাবাদ মৌজার বিআরএস ১৭৪৫ ও১৭৪৭ হাল দাগের ৬ বিঘা সরকারি জমি অন্যের নিকট বার্ষিক ৭০ হাজার টাকায় ইজারা দিয়ে নিজে ভোগ করতে দেখা গেছে ‌‌।

কয়রা সদরের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন,আমার জমি জোর পূর্বক দখল করে সেখানে বহুতল বিশিষ্ট বিল্ডিং গড়ে তুলছে। তার গুন্ডা বাহিনীর ভয়ে এখন ও এলাকাবাসী কিছু বলতে সাহস পায় না।

২ নং কয়রা গ্রামের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের বলেন,আমি একজন এতিম মানুষ।আমি খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।২০২১ সালে মাসুম বিল্লাহ তার গুন্ডা বাহিনী নিয়ে আমার বাড়িঘর ভাঙচুর করে।চেয়ারম্যান ভাগ্নে হওয়ায় পুলিশ প্রশাসন কোন সহযোগিতা করতে রাজি হননি।আমি এখন সেই দিনের ঘটনা ভুলতে পারিনি। আমার মা কে নিয়ে পথে পথে ঘুরছি।আমি বর্তমান সরকারের কাছে বিচার চাই।

কয়রা উপজেলা পরিষদ মসজিদের ইমাম আইয়ুব আলী বলেন, ২০২১ সালে থেকে উপজেলা পরিষদ মসজিদের ৩টি পুকুর বার্ষিক ৩০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে উক্ত অর্থে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন ও খাদেমের বেতন দেওয়া হয়েছে‌। কিন্তু মামা শফিকুল ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা দেখিয়ে ২০২২ সাল থেকে মাসুম বিল্লাহ মসজিদ ফান্ডে কোন অর্থ জমা দেয় নি। মসজিদ কমিটি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নিকট বার বললেও কোন সুরাহা হয় নি। এছাড়া তিনি উপজেলা পরিষদের সীমানা প্রাচীর ভেঙে নিজের বাড়ির যাতায়াত পথ নির্মাণ করেছেন। 

এব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলি বিশ্বাস বলেন,গত ৫ আগষ্টের পরে মাসুম বিল্লাহর যাতায়াত পথ বন্ধ করা হয়েছে। এবং উপজেলা পরিষদের পুকুর এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।